ব্রেইন স্ট্রোক সচেতনতা, বাঁচাতে পারে আপনার জীবন

ব্রেইন স্ট্রোক সচেতনতা, বাঁচাতে পারে আপনার জীবন

A brain stroke patient
ব্রেইন স্ট্রোক | Healthylife

ব্রেইন স্ট্রোক এখন একটি অহরহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। সচেতনতা তাই অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটি একটি জীবননাশের হুমকি যা দ্রুত চিকিৎসা ছাড়া মারাত্মক পরিনতি বরন করতে হয়। সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং নিয়মিত জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এই মারাত্মক রোগ থেকে বাঁচা সম্ভব। আমরা এখানে আলোচনা করবো ব্রেইন স্ট্রোক সম্পর্কে বিস্তারিত, এর লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধের উপায় এবং করনীয় বিষয়গুলো।

ব্রেইন স্ট্রোক কি?

ব্রেইন স্ট্রোক একটি রোগ যেখানে মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় বা রক্তনালী ছিড়ে রক্তক্ষরণ হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি না পেয়ে মারা যেতে শুরু করে। 

ব্রেইন স্ট্রোক এর লক্ষণ

ব্রেইন স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা দ্রুত শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসকের চিকিৎসা করতে সহজ হয়:

- মুখ, হাত বা পায়ে হঠাৎ দুর্বলতা বা অসাড়তা, বিশেষ করে শরীরের একপাশে এটা হতে বেশি দেখা যায়। মুখ অনেক সময় একপাশে বেঁকে যেতে দেখা যায়।

- হঠাৎ করে কথা বলায় অসুবিধা বা অন্যের কথা বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কথা বলার সময় মুখে জড়তা চলে আসতে পারে। স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারন করতে পারে না বিশেষ করে দুই অক্ষরের উপরের শব্দ বলতে বেশি অসুবিধা হয। অন্য লোক কি বলল তা বুঝতে পারে না বা কোন কথা পালন করতে পারে না।

- এক বা দুই চোখে হঠাৎ ঝাপসা দেখা বা দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

- হঠাৎ করে তীব্র মাথাব্যথা, যার কোন নির্দিষ্ট কারণ নেই।হঠাৎ তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে যদি তা বমি, মাথা ঘোরা বা রোগী অজ্ঞান হয়ে যাওয়া যুক্ত থাকে।

- হাঁটতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা বা সমন্বয়ের ক্ষতি এবং ভারসাম্য হারানো।

- খেতে অসুবিধা, কোন রোগীর খাবার গিলতে অসুবিধা হয়। পানি খাওয়ার সময় বেশি অসুবিধা হয়, কাশি চলে আসে।

ব্রেইন স্ট্রোক কেন হয়?

ব্রেইন স্ট্রোকের বিভিন্ন কারণ রয়েছে, যা একেকজনের কারন একেক রকম হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে তুলে ধরা হল:

- উচ্চ রক্তচাপ

- হৃদরোগ 

- আর্থ্রোসক্লেরোসিস(Atherosclerosis)

- ডায়বেটিস

- ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবন

- উচ্চ কোলেস্টেরল

- স্থূলতা

- অতিরিক্ত মানসিক চাপ

- পারিবারিক ইতিহাস

Brain stroke variation, Ischaemic stroke & haemorrhagic stroke
Variation of brain stroke | Healthylife 

ব্রেইন স্ট্রোক কত প্রকার?

ব্রেইন স্ট্রোকের প্রধান দুটি ধরন তা হল: ১.ইস্কেমিক স্ট্রোক(Ischaemic stroke) এবং ২.হেমোরাজিক স্ট্রোক(Haemorrhagic stroke)।

. ইস্কেমিক স্ট্রোক (Ischaemic stroke) :

এটি সবচেয়ে সাধারণ স্ট্রোক যেখানে মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্যে ব্লকেজ তৈরি হয়। এটি আবার দুই ধরণের হতে পারে:

  • থ্রম্বোটিক স্ট্রোক: মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়ে ইস্কেমিক স্ট্রোকের সৃষ্টি করে।
  • এম্বোলিক স্ট্রোক: শরীরের অন্য অংশ থেকে জমাট রক্ত  এসে মস্তিষ্কের রক্তনালীতে আটকে যায়। এতেও রক্ত চলাচল ব্যহত হয় যা ইস্কেমিক স্ট্রোকের কারন।

২. হেমোরাজিক স্ট্রোক (Haemorrhagic stroke):

এখানে রক্তনালী ব্লকেজ হয় না, এখানে যা ঘটে তা হল মস্তিষ্কে রক্তনালী ফেটে রক্তপাত হয়। এটি প্রধানত দুই প্রকার:

  • ইনট্রাসেরেব্রাল হেমোরেজ: মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্তপাত।
  • সাবআরাকনয়েড হেমোরেজ: মস্তিষ্কের চারপাশের স্থানে রক্তপাত।

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর জন্য পরীক্ষা 

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। এখানে কিছু সাধারণ পরীক্ষা উল্লেখ করা হল:

১. মেডিক্যাল ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষা:

    - রোগীর লক্ষণ এবং শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করা হয়।
    - পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

২. নিউরোলজিকাল পরীক্ষা:

    - নিউরোলজিকাল পরীক্ষা করে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়।
    - চোখের নড়াচড়া, মুখের পেশী, শক্তি, সমন্বয় এবং স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা করা হয়।

৩. ইমেজিং টেস্ট:

 সিটি স্ক্যান (CT scan):

মস্তিষ্কের বিস্তারিত ছবি পাওয়া যায় যা স্ট্রোকের ধরন এবং প্রভাব নির্ণয় করতে সাহায্য করে। হেমোরেজিক স্ট্রোক নির্ণয়ে বেশ কার্যকর। সিটি স্ক্যানে খরচ কম এবং অনেক হাসপাতালে আছে বিধায় এমআরআই থেকে সিটি স্ক্যান ব্রেইন স্ট্রোক রোগী সনাক্তকরণে বেশি ব্যবহৃত হয়।
A sample of MRI report
MRI | Healthylife

এমআরআই (MRI): 

মস্তিষ্কের বিস্তারিত এবং স্পষ্ট ছবি পাওয়া যায় যা স্ট্রোকের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার সঠিক স্থান এবং মাপ নির্ধারণ করতে সাহায্য করে। ইস্কেমিক স্ট্রোক (রক্তপ্রবাহ বন্ধ হওয়া) সনাক্তকরণে MRI বেশি কার্যকর। এটি ছোট আকারের স্ট্রোকও সনাক্ত করতে সক্ষম। তবে এটি সিটি স্ক্যানের তুলনায় খরচ বেশি এবং আমাদের দেশের কম হাসপাতাল গুলিতে এমআরআই পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

৪. রক্ত পরীক্ষা:

    - রক্তের বিভিন্ন উপাদান পরীক্ষা করা হয়, যেমন গ্লুকোজ লেভেল, ইলেক্ট্রোলাইট, কোয়াগুলেশন (রক্ত জমাট বাধার ক্ষমতা), ক্রিয়েটিনিন(কিডনি ফাংশন পরীক্ষা) ইত্যাদি।

৫. কার্ডিয়াক টেস্ট:

A sample of ECG report
ECG|Healthylife 
ইসিজি (ECG): 

হৃদয়ের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে হার্ট রিদম এবং কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়। স্ট্রোকের একটি সাধারণ কারণ হলো আট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন (AFib), যা এক ধরনের কার্ডিয়াক আরিথমিয়া। ECG পরীক্ষা এই ধরনের আরিথমিয়া সনাক্ত করতে পারে, যা থেকে রক্ত জমাট বেঁধে স্ট্রোক হতে পারে। হৃদযন্ত্রের অন্যান্য সমস্যা যেমন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা কার্ডিয়াক ইস্কেমিয়া সনাক্ত করতে ECG সাহায্য করে। এই অবস্থাগুলো স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

 ইকোকার্ডিওগ্রাম

হার্টের আল্ট্রাসাউন্ড করে হৃদয়ের কার্যক্ষমতা এবং ভেতরের কাঠামো দেখা হয়। ইকো পরীক্ষা রক্তের জমাট বাঁধা বা এমবোলিজমের কারণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা হৃদযন্ত্র থেকে মস্তিষ্কে যেতে পারে এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যখন স্ট্রোকের কোনও স্পষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। ইকো এন্ডোকার্ডাইটিসের মতো সংক্রমণ সনাক্ত করতে পারে, যা হৃদযন্ত্রের ভেতরে এমবোলিজম তৈরি করে এবং স্ট্রোকের কারণ হতে পারে।

৬. সেরিব্রাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি:

মস্তিষ্কের রক্তনালী পরীক্ষা করা হয়। সেরিব্রাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি রক্তনালীগুলোর অবস্থা নির্ধারণে সহায়ক, যেমন এনিউরিজম, আর্টেরিওভেনাস ম্যালফরমেশন (AVM), বা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে এমন অন্যান্য অবস্থা। এটি রক্তনালীগুলোর সংকোচন, ব্লকেজ বা অবরুদ্ধতা সনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, সেরিব্রাল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় করার জন্য নয় বরং সরাসরি চিকিৎসার জন্যও ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, রক্তনালীগুলোর মধ্যে ব্লকেজ অপসারণ বা স্টেন্ট স্থাপন করা।

৭. ক্যারোটিড আল্ট্রাসাউন্ড:

ঘাড়ের প্রধান রক্তনালী (ক্যারোটিড আর্টারি) পরীক্ষা করা হয় যা মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ করে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যারোটিড ধমনীতে কোনো ব্লকেজ বা সংকোচন আছে কিনা তা নির্ধারণ করা যায়, যা স্ট্রোকের ঝুঁকি মূল্যায়নে সহায়তা করে। ক্যারোটিড ধমনীতে ব্লকেজ থাকলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হয়, যার ফলে স্ট্রোক হতে পারে। 

৮. লাম্বার পাংচার(Lumbar puncture):

 মস্তিষ্কের চারপাশের তরল (সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড) পরীক্ষা করা হয় যদি সন্দেহ হয় যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর অবস্থা মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করা হয় এবং যথাযথ চিকিৎসা নির্ধারণ করা হয়।

ব্রেইন স্ট্রোক হলে করনীয়

ব্রেইন স্ট্রোক হলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে:

ফাস্ট (FAST) পরীক্ষা: মুখের হাসির সময় একপাশ ঢলে পড়ছে কিনা, হাত তুললে এক হাত নিচে নেমে যাচ্ছে কিনা, কথা বলার সময় অস্পষ্টতা হচ্ছে কিনা—এই লক্ষণগুলি দেখুন।

৯৯৯-এ ফোন করুন: দ্রুত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিন।

শান্ত রাখুন: রোগীকে শান্ত রাখুন এবং তাকে মানসিকভাবে সাহস দিন। 

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসা

ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর চিকিৎসা দ্রুত এবং কার্যকর হওয়া জরুরি। চিকিৎসা প্রধানত স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। ব্রেইন স্ট্রোকের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করলে রোগীর সুস্থতার সম্ভাবনা বেড়ে যায়:

থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি: প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যে এই ওষুধ দিলে রক্তের জমাট ভেঙে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক হয়। তবে আমাদের দেশের বেশিরভাগ রোগীরা সময়মত হাসপাতালে না আসার জন্য থ্রম্বোলাইটিক থেরাপি শুরু করা যায় না।

এন্টিপ্লেটলেট ওষুধ: রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। ইস্কেমিক স্ট্রোক সনাক্ত হওয়ার সাথে সাথে এন্টিপ্লেটলেট ওষুধ শুরু হয়ে যায়।

রক্তপাত নিয়ন্ত্রণ: হেমোরাজিক স্ট্রোকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ বা সার্জারি প্রয়োজন হতে পারে।

Take care of stroke patient
রোগীর যত্ন|Healthylife 

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর বাড়িতে যত্ন:

ব্রেইন স্ট্রোক রোগীর চিকিৎসার পাশাপাশি যত্ন নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যত্নের অভাবে রোগীর খাবারের সমস্যা হয বিশেষ করে যাদের নল দিযে খাওয়াতে হয়, ইনফেকশনের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। নড়াচড়ার অভাবে শরীরে ঘা (Bed sore) দেখা দিতে পারে।

১. ঔষধ সেবন: 

নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা। স্ট্রোকের রোগীদের অবশ্যই সেবিকা বা আত্মীয় কারোও তত্ত্বাবধানে ওষুধ খাওয়াতে হবে যতক্ষণ না বুঝা যায় রোগী নিজে নিজে ওষুধ খেতে পারবে।

২. শারীরিক থেরাপি: 

স্ট্রোকের পর ফিজিওথেরাপি খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোকের পর অবশ হাত-পায়ের মাংসগুলি শুকিয়ে যায় ও শক্ত হয়ে যায়।  ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে এগুলি রোধ করা যায় এবং চলাফেরা ও দৈনন্দিন কার্যাবলী পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়।

৩. বক্তৃতা থেরাপি

কথা বলার সমস্যা থাকলে স্পিচ থেরাপিস্টের সাহায্য নেওয়া।রোগীর নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুযায়ী থেরাপি পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। এতে শব্দ, বাক্য গঠন, ভাষাগত অনুশীলন, এবং কথোপকথনের দক্ষতা বাড়ানোর বিভিন্ন কৌশল অন্তর্ভুক্ত থাকে। পাশাপাশি, স্ট্রোক রোগীদের প্রায়শই মেমরি এবং কগনিটিভ দক্ষতার সমস্যা হয়। সেজন্য, থেরাপিস্ট কগনিটিভ ব্যায়াম এবং মেমরি উন্নত করার জন্য বিভিন্ন কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করবেন।

৪. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: 

স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা, যাতে ফল, সবজি, এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার থাকে। ব্রেইন স্ট্রোক করা যেসব রোগীকে নাকের নল দিয়ে খাবার দিতে হয় তাদেরও পুষ্টির বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। নল দিয়ে খাবারের সময় অনেক পুষ্টিকর খাবার বাদ পরার সম্ভাবণা থাকে।

৫. মানসিক সমর্থন: 

রোগীকে মানসিকভাবে শক্তিশালী রাখতে পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। রোগীকে সময় দেয়া, তার সাথে গল্প-আড্ডা দেয়া। হুইল চেয়ারে করে বাহিরে ঘুরতে যাওয়া। স্ট্রোক রোগীর মানসিক সমর্থন রোগীর উন্নতির জন্য বেশ সহাযক।

৬. নল দিয়ে খাওয়ানো (Feeding Tube):

ব্রেইন স্ট্রোকের পর অনেক রোগীর গলাধঃকরণ ক্ষমতা কমে যেতে পারে, ফলে তারা স্বাভাবিকভাবে খেতে পারে না। এ ক্ষেত্রে নল দিয়ে খাওয়ানো প্রয়োজন হতে পারে।প্রকারভেদ: নাসোগ্যাস্ট্রিক (NG) টিউব বা গ্যাস্ট্রোস্টোমি (PEG) টিউব ব্যবহৃত হতে পারে।

NG টিউব: নাক দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়।

PEG টিউব: পেটের উপর ছোট একটি ছিদ্রের মাধ্যমে পাকস্থলীতে প্রবেশ করানো হয়।

যত্ন:

   - টিউব সবসময় পরিষ্কার ও সঠিকভাবে অবস্থান করছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

   - খাদ্য ও তরল সঠিক মাত্রায় এবং পুষ্টিকর কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে।

   - সংক্রমণ রোধে টিউবের চারপাশের ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে।

Urinary catheter
Urinary catheter | Healthylife 

৭. প্রসাবের রাস্তায় নল (Urinary Catheter):

ব্রেইন স্ট্রোকের পর অনেক রোগীর মূত্রথলির কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, ফলে তারা প্রস্রাব করতে পারেন না। ক্যাথেটার দিয়ে তখন তাদের প্রসাবের ব্যবস্থা করতে হয়। এক্ষেত্রে ফোলিস ক্যাথেটার(Foley's catheter) সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

প্রক্রিয়া:

- নল মূত্রথলির মধ্যে প্রবেশ করানো হয়।

- প্রস্রাব একটি ব্যাগে সংগ্রহ করা হয় যা নিয়মিত খালি করতে হয়।

যত্ন:

 - ক্যাথেটার এবং তার আশেপাশের এলাকা সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

 - সংক্রমণ রোধে নিয়মিত ক্যাথেটার পরিবর্তন করতে হবে।

 - পর্যাপ্ত তরল পান করানো যাতে মূত্রথলি পরিষ্কার থাকে।

 সতর্কতা:

সংক্রমণের ঝুঁকি: নাকে নল বা প্রসাবে নল উভয় প্রক্রিয়াতেই সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে, তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

রোগীর স্বাচ্ছন্দ্য: রোগীর স্বাচ্ছন্দ্য বজায় রাখতে যত্ন নিতে হবে এবং কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রশিক্ষণ: যারা রোগীর যত্ন নিচ্ছেন, তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নেয়া উচিত।

ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর ব্যায়াম

ব্রেইন স্ট্রোকের রোগীর শারীরিক পুনর্বাসনের জন্য কিছু বিশেষ ব্যায়াম করানো যেতে পারে:

শারীরিক ব্যায়াম

রেঞ্জ অব মোশন (ROM) ব্যায়াম:

প্যাসিভ ROM: থেরাপিস্ট বা কেয়ারগিভার রোগীর অঙ্গগুলোকে ধীরে ধীরে সরিয়ে নেয়।

অ্যাক্টিভ ROM: রোগী নিজেই তার অঙ্গগুলো সরিয়ে নেয়।

বালান্স এবং স্টেবিলিটি ব্যায়াম:

 - এক পায়ে দাঁড়ানো (সমর্থন সহ)

 - একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে স্থির থাকা

পায়ের ব্যায়াম:

 - হাঁটা অনুশীলন

 - পা উঁচু করে রাখা (লেগ লিফ্ট)

হাত এবং কাঁধের ব্যায়াম:

 - আর্ম রেইজ (বাহু উপরে তোলা)

 - কাঁধের রোটেশন

মানসিক এবং কগনিটিভ ব্যায়াম

  • পাজল এবং গেম: চিন্তার দক্ষতা উন্নত করার জন্য পাজল এবং মস্তিষ্কের গেম খেলা।
  • স্মৃতি ব্যায়াম: বিভিন্ন স্মৃতি শক্তির ব্যায়াম, যেমন ছবির সাথে নাম মিলানো।
  • বই পড়া এবং লেখার অনুশীলন: মনোযোগ এবং ভাষাগত দক্ষতা উন্নত করার জন্য। 
  • মেডিটেশন: মানসিক চাপ কমাতে ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য মেডিটেশন খুব ভাল কাজ দেয়। আপনার ধর্ম অনুসারে প্রার্থনা করুন, এটিও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

দৈনন্দিন কার্যকলাপ

  • বসা এবং দাঁড়ানোর অনুশীলন: চেয়ার থেকে উঠা এবং বসা।
  • প্রাত্যহিক কাজ: নিজের যত্ন নেওয়া, যেমন দাঁত ব্রাশ করা, কাপড় পরা ইত্যাদি।
  • যোগ ব্যায়াম: হালকা যোগ ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং যা স্থিতিশীলতা ও নমনীয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

 নির্দেশনা

  • উপযুক্ত গাইডেন্স: সব ব্যায়াম থেরাপিস্ট বা বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুযায়ী করা উচিত।
  • ধীরগতিতে শুরু করা: প্রথমে সহজ এবং কম সময়ের জন্য ব্যায়াম শুরু করতে হবে এবং ধীরে ধীরে সময় এবং জটিলতা বাড়ানো যেতে পারে।
  • নিয়মিত বিরতি: ব্যায়ামের সময় মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে যাতে অতিরিক্ত ক্লান্তি না হয়।
  • আনন্দিত থাকা: ব্যায়ামের সময় আনন্দিত এবং ইতিবাচক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

ব্রেইন স্ট্রোক চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি:

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ:

নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখা। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ মতে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: 

সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং ফাস্টফুড, ট্রান্স ফ্যাট ও অতিরিক্ত লবণ পরিহার করা।

নিয়মিত ব্যায়াম:

প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা।

ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করা:

ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকা।

ওজন নিয়ন্ত্রণ:

স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা এবং স্থূলতা পরিহার করা।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, যোগব্যায়াম বা ধ্যান করা।

পরিশেষে 

ব্রেইন স্ট্রোক থেকে বাঁচতে এবং সুস্থ জীবনযাপন করতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করতে হবে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা আমাদের ব্রেইন স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। অতএব, আমাদের জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে এবং সুস্থ থাকতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.