হৃদরোগ থেকে বাঁচতে কী করবেন? জেনে নিন। | Healthylife
হৃদরোগ থেকে বাঁচতে কী করবেন? জেনে নিন।
বর্তমান বিশ্বে হৃদরোগ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং মানসিক চাপ—এসবই হৃদরোগের মূল কারণ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সচেতনতা অবলম্বন করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। আসুন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে জেনে নেই কীভাবে সুস্থ হৃদযন্ত্র ধরে রাখা যায়।
১.সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
হৃদরোগ প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ফাষ্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত প্যাকেজিং খাবারের মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে থাকি। তাই হৃদযন্ত্রের সুস্থতার জন্য খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত খাবারগুলো হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী:
- তাজা শাকসবজি ও ফলমূল
- ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: সামুদ্রিক মাছ, আখরোট, ফ্ল্যাক্সসিড)। মাঝে মাঝে ওমেগা-৩ সাপ্লিমেন্টও খেতে পারেন।
- সম্পূর্ণ শস্য (যেমন: ওটস, ব্রাউন রাইস, গমের লাল আটা রুটি)
- স্বাস্থ্যকর ফ্যাট (যেমন: অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো)
- বাদাম (যেমন: কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, চিনা বাদাম)
যদি হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে চান তবে আজ থেকেই প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত লবণ, চিনি এবং ট্রান্স ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
২. নিয়মিত ব্যায়াম করুন
শারীরিক সক্রিয়তা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরনের ব্যায়াম (যেমন: হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার) করার পরামর্শ দেন। ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, কোলেস্টেরল কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হৃদরোগ প্রতিরোধে প্রানায়াম খুব উপকারী বিশেষ করে কপালভাতি ও অনুলোম বিলোম প্রানায়াম।
৩. ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন
ধূমপান হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি রক্তনালীকে সংকুচিত করে এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষজ্ঞরা ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করার পরামর্শ দেন। এছাড়া, অতিরিক্ত মদ্যপানও হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।
৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি বড় কারণ। বিশেষজ্ঞরা ইয়োগা, মেডিটেশন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানোর পরামর্শ দেন।
৫. রক্তচাপ ডায়বেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুন। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন
অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেন। আপনার BMI( Body mass index) কত আছে জেনে নিন, সঠিক মাত্রায় না থাকলে তা সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসুন।
৭. নিয়মিত চেকআপ করুন
বিশেষজ্ঞরা ৪০ বছর বয়সীদের নিয়মিত হৃদযন্ত্রের চেকআপ করার পরামর্শ দেন। এছাড়া, পরিবারে হৃদরোগের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সচেতন হোন। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, প্রতি ছয় মাস বা এক বছর অন্তর হৃদযন্ত্রের অবস্থা পরীক্ষা করানো উচিত। বিশেষ করে, যদি পরিবারে কারও হৃদরোগের ইতিহাস থাকে, তবে সতর্ক থাকা জরুরি।
উপসংহার
হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতা ও সঠিক জীবনযাপনই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিলে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখা সম্ভব। আজ থেকেই শুরু করুন স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলুন।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন