রাতে ভালো ঘুমের জন্য ৮টি টিপস | Healthylife
রাতে ভালো ঘুমের জন্য ৮টি টিপস
ঘুম আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি ভালো ঘুম আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য খুব জরুরি। বর্তমান ব্যস্ত জীবনে বিশেষ করে শহুরে জীবনে অনেকেই ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। এই ব্লগ পোস্টে আমরা ভালো ঘুমের জন্য ৮টি কার্যকর টিপস নিয়ে আলোচনা করব।
১. নিয়মিত ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করুন
নিয়মিত ঘুমানোর সময় নির্ধারণ করলে আপনার শরীর একটি নিয়মিত রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা আপনার বায়োলজিক্যাল ক্লককে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করবে। এর ফলে আপনার ভাল ঘুম হবে এবং ঘুম আসতে যে বেশী সময় লাগে তা কমে আসবে।
২. আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন
ঘুমের জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা ঘর ঘুমের জন্য জরুরী। ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এছাড়াও, আরামদায়ক বিছানা এবং বালিশ ব্যবহার করা উচিত। রাতে ঘুমানোর সময় যেকোনো ধরনের আলো বা শব্দ থেকে মুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন।
৩. শারীরিক ক্রিয়াকলাপ বাড়ান
নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ ভাল ঘুমের জন্য জরুরী। ব্যায়াম আপনার শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে, যা দ্রুত ঘুমাতে সাহায্য করে। যারা ব্যায়াম করতে পারবেন না তারা ভোরে ৪০/৫০ মিনিট একটানা হাটুন। তবে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘন্টা আগে ব্যায়াম করা উচিত, কারণ বেশি রাতের ব্যায়াম আপনার শরীরকে উত্তেজিত করতে পারে, যা উল্টো ফল দেয় মানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৪. খাদ্য ও পানীয় নিয়ন্ত্রণ
আপনার খাবার ও পানীয় ঘুমের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ঘুমানোর আগে ভারী খাবার, ক্যাফেইন এবং এলকোহল পরিহার করা উচিত। ভারী খাবার হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ক্যাফেইন এবং এলকোহলও ঘুমের গুণমান কমাতে পারে। তাই রাতে চা বা কফি পান থেকে দূরে থাকুন। এলকোহল ছাড়তে চেষ্টা করুন, না পারলে একদম কমিয়ে ফেলুন। ঘুমানোর ঠিক আগে ধূমপান করলেও ঘুম আসতে দেরি হয়।
৫. রাতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিহার করুন
ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদন বাধাগ্রস্ত করে, যা ঘুমানোর প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করে। তাই ঘুমানোর কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস (যেমন, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, টিভি) পরিহার করা উচিত। বই পড়া বা গান শোনার মতো শিথিলকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। তবে নিজেকে উত্তেজিত করে এমন কোন বই পড়া বা গান শোনা যাবে না।
৬. স্ট্রেস ও উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ
স্ট্রেস ও উদ্বেগ ঘুমের প্রধান শত্রু। মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিভিন্ন শিথিলকরণ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম। এছাড়া, নিজের অনুভূতি নিয়ে কথা বলা বা ডায়েরি লেখা মনকে হালকা করতে পারে এবং ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে। শুয়ে শুয়ে কোন সুখকর স্মৃতি চিন্তা করতে পারেন
৭. ঘুমানোর আগে রুটিন তৈরি করুন
ঘুমানোর আগে একটি নিয়মিত রুটিন তৈরি করলে মন এবং শরীরকে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত করা সহজ হয়। আপনি প্রতিদিন একই কার্যক্রম করতে পারেন, যেমন, হালকা স্ট্রেচিং, বই পড়া, অথবা গোসল করা। এই কার্যক্রমগুলো মস্তিষ্ককে সংকেত দেয় যে ঘুমানোর সময় এসে গেছে।
৮. পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ
প্রতিদিন পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ মেলাটোনিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা ভালো ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয়। দিনের বেলা বাইরে সময় কাটানো বা জানালার পাশে বসে কাজ করার চেষ্টা করুন। তবে সরাসরি সূর্যালোক থেকে সুরক্ষিত থাকতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
পরিশেষে
ভালো ঘুম আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ঘুমের সমস্যায় গ্রামের মানুষের চেয়ে শহরের মানুষেরা বেশী ভুগে। গ্রামের মানুষ বেশী শারীরিক পরিশ্রম করে, তাদের শরীরে যথেষ্ট রোদ লাগে। এছাড়া গ্রামে শহরের মত শব্দদূষণ হয় না। তাই শহরের মানুষের ঘুমের সমস্যা বেশী। উপরের টিপসগুলো মেনে চললে আপনি কম ঘুম বা ঘুম আসতে দেরি হওয়া সমস্যা রোধ করতে পারবেন এবং প্রতিদিন সকালে সতেজ অনুভব করবেন। ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ছাড়াও কিছু রোগে ঘুমের সমস্যা হয়। সেসব ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে যায়, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন