ডালিম বা বেদানার বিস্ময়কর খাদ্যগুন।
ডালিম বা বেদানা | healthylife |
ফলের মধ্যে ডালিম বা বেদানা হল এমন একটি ফল যার পুষ্টিগুণ অনেক। এর ইংরেজি নাম পমাগ্রেনেট (Pomegranate)। কোনো কোনো জায়গায় এই ফল আনার নামেও পরিচিত। ডালিম খুবই মিষ্টি স্বাদের এক ফল। সাধারণত বেদানার বাইরের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে ভেতর থেকে লাল রঙের স্ফটিকাকার দানাগুলি খাওয়া হয়।
বেদানা বা ডালিম হল পৃথিবীর সবথেকে বেশী স্বাস্থ্যকর ফল। এটি এমন একটি ফল যার খাদ্যগুণ এত বেশী থাকায় অন্য কোনো ফলই এর ধারে কাছেও নেই। বেদানায় আছে প্যু্নিক্যালাগিনস্ ও প্যু্নিসিক্ অ্যাসিড, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। প্যু্নিক্যালাগিনস্-এ থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। ফলে নিয়মিত বেদানা খেলে হৃদরোগ, অ্যালজাইমারস্, ডায়বেটিস্, ওবেসিটির মত অসুখের হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়।
ডালিম বা বেদানার পুষ্টিগুণ :
বেদানার খাদ্যগুণ অন্যান্য অনেক খাবারের তুলনায় বেশী পাওয়া যায়। যা ভিটামিন, প্রোটিন, ফাইবার ও বিভিন্ন রকমের মিনারেলস্-এর ভরপুর সম্ভার। বর্তমান চিকিৎসাবিজ্ঞানে দেখা যাচ্ছে, শিশুদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বেদানা বা ডালিমের রস (Pomegranate Juice) রাখলে তা শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে উপযোগী। প্রতিদিন একটি করে গোটা বেদানা চিবিয়ে খেলে স্থূলতা বা মেদবৃদ্ধি (Obesity) কিংবা ডায়বেটিস (Type-2 )এর মত অসুখের হাত থেকে মানব শরীরকে রক্ষা করে।
ডালিম বা বেদানা | healthylife |
ডালিম বা বেদানার রোগ প্রতিরোধকারী ক্ষমতা
Immunity বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের রোগ বা অন্যান্য সবরকম ক্ষতিকারক অণুজীব (ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস)-এর হাত থেকে রক্ষা করে। বেদানায় আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা শরীরকে ক্ষতিকারক অণুজীবগুলির হাত থেকে রক্ষা করে। এতে শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে ডালিমের ভূমিকা
হিমোগ্লোবিন কম বা রক্তাল্পতার অর্থ হল লোহিত রক্ত কণিকার অভাব। ডালিম আয়রন ঘাটতিজনিত রক্তসল্পতায় শরীরে আয়রনের অভাব মিটিয়ে তুলতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে রক্তের সংখ্যা বা Blood Count বাড়ানোর জন্য রোজকার খাবার তালিকায় ডালিমের রস বা ফাইবার সমেত ডালিম খাওয়া যেতে পারে। ডালিমে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, আয়রন, ভিটামিন সি এর মতো উপাদান। তাই নিয়মিত ডালিম খাওয়ার পর নিজেই হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধির পার্থক্য দেখতে পারবেন।
আইবিএস্ (IBS)-এর মত সমস্যা হ্রাস করতে সাহায্য করে ডালিম বা বেদানা
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে IBS (Irritable Bowel Syndrome) বা এককথায় অন্ত্রের অনেক সমস্যার কথা সকলের মুখ থেকেই শোনা যায়। বেদানার বীজে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার (Fibre)। তাই কোলনের সমস্যা আছে এমন ধরনের ব্যাক্তির (ব্যতিক্রমী ছাড়া) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ বেদানার বীজ পেটের পক্ষে খুবই উপযোগী।
![]() |
ডালিম বা বেদানা | healthylife |
বেদানা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী
বেদানা বা ডালিম শরীরে অ্যান্জিওটেনসিন্ কনভার্টিন এনজাইম (Angiotensin Convertin Enzyme বা ACE) কমিয়ে রক্তের চাপ কমায়। ACE বা এএসই হল একধরনের প্রোটিন, যা শরীরের রক্তনালীর আকার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। দেখা গেছে, রক্তের উচ্চচাপযুক্ত (Hypertension) কিছু মানুষ টানা দু'সপ্তাহ ধরে বেদানার রস খাওয়ার ফলে তাদের রক্তের চাপ কম হয় ও তাদের রক্তচাপ বা বিপি লেভেল (BP Level) নিয়ন্ত্রণের আসে।
বেদানা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
হৃৎপিন্ডের সবচেয়ে ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ডালিমের রসের জুড়ি মেলা ভার। উচ্চমানের ডালিম আটকে থাকা ধমনী গুলি পরিষ্কার করতে এবং রক্ত প্রবাহকে উন্নত করতে সাহায্য করে। এটা ফ্রি রেডিকাল ফাইটিং ফল। এর কারণ ডালিমে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা রক্তে নাইট্রিক অক্সাইড-এর উৎপাদনকে উদ্দীপন করে। তাই ডালিমের রসে আলগা চিনি না দিয়ে, খাঁটি রস খাওয়াই উপকারী।
আর্থারাইটিস সমস্যায় উপকারী বেদানা
আর্থারাইটিস অর্থাৎ মানব-শরীরে হাড়ের দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এই অসুখ অধিক দেখা গেলেও বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশেও এই অসুখ আধিপত্য গড়েছে। বেদানায় আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-দমনকারী উপাদান। যা ব্যাথা কমায়। এবং একই সাথে ডালিম কার্টিলেজ-ধ্বংসকারী এনজাইম উৎপাদন কমায়। এতে হাড়ের যৌথ কোমলতা (Joint Tenderness) বা হাড়ের নরম হওয়া কমিয়ে দেয়।
বেদানা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে
শরীরে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হল ক্যান্সার । ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের হয়। তার মধ্যে কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও প্রস্টেট ক্যান্সার খুবই চেনা। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেদানার নির্যাস ক্যান্সারের কোষের পুনরোৎপাদন ধীর করে এবং ক্যান্সার কোষের মৃত্যুও ঘটায়।
বেদানা বা ডালিম খেলে চুল পড়ার হার কমে
অতিরিক্ত হেয়ার ফলের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে প্রতিদিন ডালিম বা বেদানার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন হেয়ার ফলের মাত্রা তো কমবেই, সেই সঙ্গে চুলের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে চোখে পরার মতো।
![]() |
ডালিম বা বেদানা | healthylife |
দাঁত শক্ত হয়
অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল প্রপাটিজে পরিপূর্ণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র মুখ গহ্বরের ভিতরে উপস্থিত ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে। ফলে ক্যাভিটির মতো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
উজ্জ্বল ত্বকের যত্ন নিতে বেদানা
বেদানা একদিকে যেমন হজম শক্তি বাড়ায় অন্যদিকে শরীরে রক্ত চলাচলও স্বভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আর যে কোনো মানুষের শরীরের এই দুটো দিক সঠিক থাকলে তার ত্বকের ঔজ্জ্বল্য আপনা আপনি বৃদ্ধি পায়। এতে ত্বক চক্ চকে, মসৃণ ও উজ্জ্বল বর্ণের হয়। বেদানায় থাকা এলাজিক অ্যাসিড (পলিফেনল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট) রোদে পোঁড়ার হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
বলা যেতেই পারে, বেদানা হল পৃথিবীর সবথেকে বেশী স্বাস্থ্যকর ও নিরাময় খাবার। যার শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তুলনায় কার্যকারিতা অনেক বেশী। এর উপকারিতা এত বেশী যে, শরীরকে বিভিন্ন রকমের দুরারোগ্য রোগের হাত থেকে নিস্তার দেয়। যা ভরপুর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। এর প্রদাহদায়ী ক্ষমতা শরীরকে নানা রকমের ব্যাথার হাত থেকেও মুক্তি দেয়। এমনকি বেদানা বা ডালিম মানুষের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়ক। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও শরীরকে বিভিন্ন রোগ-জীবাণুর থেকে দূরে রাখতে নিয়মিত ডালিমের অ্যারিলস্ (Arils) বা ডালিমের রসের উপকারীতা সত্যিই অনস্বীকার্য।
কারা খাবেন না-
কম রক্তচাপের সমস্যা থাকলে বেদানা খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। যদিও এখন উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের থাকে। আর আপনার যদি কম রক্তচাপের মত সমস্যা থাকে তাহলে বেদানা মারাত্মক ক্ষতিকারক। কারণ তাতে রক্তচাপ আরো কমে যেতে পারে।
মানসিক রোগে আক্রান্ত রোগীরা যারা নিয়মিত মানসিক রোগের জন্য ওষুধ খান তাদের জন্য বেদানা প্রায় বিষের সমান। কোনো ভাবেই এই ফল তাদের দেয়া যাবে না।অ্যালার্জিতে বেদানা খাওয়া ক্ষতিকর। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের ধুলো, বালি বা কোনো নোংরা জায়গায় গেলেই অ্যালার্জি হয়। তাদের বেদানা খাওয়া খুব ক্ষতিকর। বেদানায় এমন কিছু উপাদান আছে যা অ্যালার্জির সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন