add

গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife


গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife

গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife
Heatstroke | Healthylife

হিট স্ট্রোক কী?


হিট স্ট্রোক (Heat stroke) বা সান স্ট্রোক (sun stroke) এক ধরনের অসুস্থতা, যা অত্যধিক গরমের কারনে হয়ে থাকে। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ᱸ ফারেনহাইট-এর বেশি এবং সাথে শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়।

হিট স্ট্রোক কাদের বেশি হয়?

প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—

* শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

* দিনের বেলায় যারা প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।

* শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

* কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষন্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি।

গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife
Heat Cramp | Healthylife

হিট স্ট্রোকের বা সান স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী?

তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক অবস্থা তা হল হিট ক্র্যাম্প অথবা হিট এক্সহসশন হতে পারে। হিট ক্র্যাম্পে শরীরের মাংসপেশিতে টান টান ব্যথা হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং প্রচণ্ড পিপাসা পায়। এর পরের ধাপে হিট এক্সহসশনে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস, মাথাব্যথা, ঝিমঝিম করা, বমিভাব, অসংলগ্ন আচরণ ইত্যাদি দেখা দেয়। এই দুই ক্ষেত্রেই শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ঠিক থাকে এবং শরীর অত্যন্ত ঘামতে থাকে। এ অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। এর লক্ষণ গুলো হলো—

* শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত ১০৪ ডিগ্রিº ফারেনহাইট ছাড়িয়ে যায়।

* ঘাম বন্ধ হয়ে যায়।

* ত্বক শুষ্ক ও লালচে হয়ে যায়।

* নিশ্বাস দ্রুত হয়।

* নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দ্রুত হয়।

* রক্তচাপ কমে যায়।

* খিঁচুনি, মাথা ঝিমঝিম করা, অস্বাভাবিক আচরণ, হ্যালুসিনেশন, অসংলগ্নতা ইত্যাদি।

* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।

* রোগী শকেও চলে যায়। এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।

গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife
Heat Exhaustion | Healthylife

প্রতিরোধের উপায় কী?

গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এগুলো হলো—

* হালকা, ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। কাপড় সাদা বা হালকা রঙের হতে হবে। সুতি কাপড় হলে ভালো।

* যথাসম্ভব ঘরের ভেতরে বা ছায়াযুক্ত স্থানে থাকুন।

* বাইরে যেতে হলে মাথার জন্য চওড়া কিনারাযুক্ত টুপি, ক্যাপ বা ছাতা ব্যবহার করুন।

* বাইরে যাঁরা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকেন, তাঁরা মাথায় ছাতা বা মাথা ঢাকার জন্য কাপড়জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে পারেন।

* প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করুন। মনে রাখবেন, গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুই-ই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে। পানি অবশ্যই বিশুদ্ধ হতে হবে।

* তাপমাত্রা বৃদ্ধিকারী পানীয় যেমন-চা ও কফি যথাসম্ভব কম পান করা উচিত।

* রোদের মধ্যে শ্রমসাধ্য কাজ করা থেকে বিরত থাকুন। এসব কাজ সম্ভব হলে রাতে বা খুব সকালে করুন। যদি দিনে করতেই হয়, তবে কিছুক্ষণ পরপর বিশ্রাম নিতে হবে ও প্রচুর পানি ও স্যালাইন পান করতে হবে।

* ব্যায়াম ভোরবেলায় করুন। তাপদাহ বিদ্যমান থাকলে ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ বা অবশ্যই সূর্যোদয়ের আগে বা খুব ভোরে করতে হবে। এটাও পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার অনেক বড় একটি কারণ।

* অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন গরমের দিনগুলোতে অ্যালকোহল গ্রহন থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। কারণ, অ্যালকোহল বা সুগার ড্রিঙ্কস-গুলো শরীরে ডিহাইড্রেশন (dehydration) বা পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।

গরমে হতে পারে হিট স্ট্রোক, প্রতিরোধের উপায়! | Healthylife
হিট স্ট্রোক | Healthylife

প্রাথমিক চিকিৎসা

প্রাথমিকভাবে হিট স্ট্রোকের আগে যখন হিট ক্র্যাম্প বা হিট এক্সহসশন দেখা দেয়, তখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজেই যা করতে পারেন তা হলো—

* দ্রুত শীতল কোনো স্থানে চলে যান। যদি সম্ভব হয়, ফ্যান বা এসি ছেড়ে দিন।

* ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে ফেলুন। সম্ভব হলে গোসল করুন।

* প্রচুর পানি ও খাবার স্যালাইন পান করুন। চা বা কফি পান করবেন না।


কিন্তু যদি হিট স্ট্রোক হয়েই যায়, তবে রোগীকে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে, ঘরে রেখে চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর আশপাশে যাঁরা থাকবেন তাঁদের করণীয় হলো—

* রোগীকে দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান।

* তাঁর কাপড় খুলে দিন।

* শরীর পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে বাতাস করুন। এভাবে তাপমাত্রা কমাতে থাকুন।

* সম্ভব হলে কাঁধে, বগলে ও কুচকিতে বরফ দিন।

* রোগীর পরিপূর্ন জ্ঞান থাকলে তাঁকে খাবার স্যালাইন দিন।

* দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

* সব সময় খেয়াল রাখবেন হিট স্ট্রোকে অজ্ঞান রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস এবং নাড়ি চলছে কি না। প্রয়োজন হলে কৃত্রিমভাবে নিশ্বাস ও নাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হতে পারে।

হিট স্ট্রোকে জীবননাশ হতে পারে। তাই এই গরমে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে এর থেকে মুক্ত থাকা যায়।

বয়স্কদের ও শিশুদের জন্য পরামর্শ 

সব বয়সী মানুষের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোক এক রকম হলেও, বয়স্ক ও শিশুদের প্রতি অধিক খেয়াল করা জরুরি।  লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তাদের শরীরে কোনভাবেই পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। যেহেতু ১-২ বছর বয়সী শিশুরা নিজেদের শারীরিক অসুবিধাগুলোর কথা বলতে পারে না, তাই গরমের দিনে তাদের বার বার পানি বা শরবত দিতে হবে। শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি বাড়তে দেয়া যাবে না। তাদের খোলামেলা জায়গায় বা প্রচুর বাতাস আছে এরকম জায়গায় রাখতে হবে।

শিশুদের মতো বয়স্কদের জন্যও খোলামেলা স্থান বাছাই করা উচিত। যাদের ডায়াবেটিস (diabetes)– এর সমস্যা রয়েছে তাদের শরবত বা মিষ্টি জুস না দিয়ে পানি, ডাবের পানি(নারিকেলের মিষ্টি পানি নয়) এগুলো দিতে হবে।

হিট স্ট্রোক বা সান স্ট্রোক এর শিকার এই গরমে আমি বা আপনি যে কোন সময়ে হতে পারি। তৎক্ষণাৎ প্রতিরোধের বা মোকাবেলার উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই এ থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।

Thank you from-

healthylife, healthylife-bd


এটি একটি শিক্ষণীয় আর্টিকেল, চিকিৎসার জন্য নয়। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ সেবন করবেন না। 



















 





কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.