প্রসাবে জ্বালাপোড়া: কারণ, লক্ষণ, এবং ঘরোয়া টিপস | Healthylife
প্রসাবে জ্বালাপোড়া: কারণ, লক্ষণ, এবং ঘরোয়া টিপস
![]() |
প্রসাবে জ্বালাপোড়া |
প্রসাবে জ্বালাপোড়ার কারণ
প্রসাবে জ্বালাপোড়া একটি কষ্টকর অবস্থা। তবে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রসাবে জ্বালাপোড়ার ঘটনা বেশি দেখা যায়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ হলো:
১. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। ব্যাকটেরিয়া মূত্রনালি ও মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটালে প্রসাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
২. পানিশূন্যতা: শরীরে পানির অভাব হলে বা পানিশূন্যতা হলে প্রসাবে জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করতে পারে।
![]() |
কিডনি বা মূত্রনালির পাথর |
৩. কিডনি বা মূত্রনালির পাথর: কিডনি বা মূত্রনালিতে পাথর থাকলে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে। অনেক সময় প্রসাবের সাথে রক্তও যেতে পারে।
৪. যৌন সংক্রমণ: কিছু যৌন সংক্রমণ, যেমন গনোরিয়া বা ক্লামাইডিয়া, প্রসাবে জ্বালাপোড়ার কারণ হতে পারে।
৫. অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস: অনিয়ন্ত্রিত ডায়বেটিস থাকলে প্রস্রাবে অতিরিক্ত সুগার থাকতে পারে, যা মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। আর মূত্রনালির সংক্রমন হলে প্রসাবে জ্বালাপোড়া করে।
প্রসাবে জ্বালাপোড়ার লক্ষণ
প্রসাবে জ্বালাপোড়া হলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়:
- প্রস্রাবের সময় বা পরে জ্বালাপোড়া অনুভব করা
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা
- প্রস্রাবে রক্ত পড়া
- প্রস্রাবের দুর্গন্ধ
- পেটের নিচের অংশে বা কোমরের দিকে ব্যথা
ঘন ঘন প্রস্রাব কিসের লক্ষণ?
ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ নিচে দেওয়া হলো:
১. প্রসাবে সংক্রমণ (UTI): এটি ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রধান কারণ।
২. ডায়বেটিস: রক্তে সুগার লেভেল বেশি থাকলে কিডনিকে অতিরিক্ত ফিল্টার করতে বাধ্য করে।
![]() |
প্রস্টেটের বৃদ্ধি |
৩. প্রস্টেট সমস্যা: পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রস্টেটের বৃদ্ধি মূত্রনালীতে চাপের সৃষ্টি করতে পারে। প্রস্টেট বৃদ্ধির জন্য প্রসাব মূত্রাশয়ে জমা থাকতে পারে। ফলে প্রসাবের সংক্রমণের আশংকা বেড়ে যায়।
4. ডায়ুরেটিক ঔষধ(Diuretic): কিছু ঔষধ মূত্রের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা এ ধরনের ওষুধ খান তাদের ঘন ঘন প্রসাব হতে পারে।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমানোর ঘরোয়া উপায়
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করলে মূত্রনালির সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায় এবং প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।
![]() |
ক্র্যানবেরি জুস |
ক্র্যানবেরি জুস
ক্র্যানবেরি জুস মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
বেকিং সোডা
এক গ্লাস পানিতে অল্প বেকিং সোডা মিশিয়ে পান করলে প্রস্রাবের অম্লতা কমে যায় এবং জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। বাজারে এ ধরনের সিরাপও পাওয়া যায় যা চিকিৎসকের পরামর্শে সেবন করতে পারেন।
দই
দইয়ে প্রোবায়োটিক থাকে যা মূত্রনালির সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া প্রোবায়োটিক আপনার পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
![]() |
ডাবের পানি |
ডাবের পানি
ডাবের পানি প্রাকৃতিক ডাইউরেটিক হিসেবে কাজ করে যা প্রস্রাবের সময় আরাম দেয়। তাছাড়া ডাবের পানি শরীরের প্রয়োজনীয় লবনের ভারসাম্যতায় অবদান রাখে।
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমানোর ঔষধ
যদি ঘরোয়া উপায়ে সমস্যা না কমে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিছু সাধারণ ওষুধ হলো যা আপনার চিকিৎসক দিতে পারেন:
অ্যান্টিবায়োটিক: মূত্রনালির সংক্রমণের জন্য সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়।
অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ: ফাঙ্গাল সংক্রমণের জন্য।
অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ: প্রদাহ কমানোর জন্য।
পেইন রিলিফ ওষুধ: ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমানোর জন্য।
প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত পরা:
কারণ
প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত পরা বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে:
1. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): সংক্রমণ হলে মূত্রনালির দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, ফলে রক্তপাত হতে পারে।
2. কিডনির পাথর: কিডনির পাথর মূত্রনালি দিয়ে অতিক্রম করার সময় ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে, যা রক্তপাতের কারণ হতে পারে।
3. প্রস্টেটের সমস্যা: প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ বা প্রস্টেট ক্যান্সারও প্রস্রাবে রক্তের কারণ হতে পারে।
4. ব্লাডারের টিউমার: ব্লাডারের ক্যান্সার বা টিউমার প্রস্রাবে রক্তপাত ঘটাতে পারে।
5. আঘাত: মূত্রনালিতে আঘাত বা ট্রমা হলে রক্তপাত হতে পারে।
6. বেশি দৌড়ানো বা শারীরিক কসরত: কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শারীরিক কসরত বা দৌড়ের ফলে প্রস্রাবে রক্তপাত হতে পারে।
লক্ষণ
প্রস্রাবে রক্ত পড়ার সাথে সাথে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যেতে পারে:
- প্রস্রাবে গোলাপী, লাল রং
- পেটের নিচের অংশে বা কোমরের দিকে ব্যথা
- ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রবণতা
- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া
চিকিৎসা
প্রস্রাবে রক্ত পড়ার জন্য ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তার সংক্রমণ, পাথর, টিউমার বা অন্য কোনও কারণ সনাক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারেন, যেমন:
প্রসাবের পরীক্ষা: প্রস্রাবে ব্যাকটেরিয়া, রক্ত, এবং অন্যান্য উপাদানের উপস্থিতি পরীক্ষা করা।
ইমেজিং টেস্ট: আল্ট্রাসাউন্ড, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই এর মাধ্যমে মূত্রনালির অবস্থা পরীক্ষা করা।
![]() |
সিস্টোস্কপি (Cystoscopy) |
প্রস্রাবে রক্ত পড়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক কারন অনুযায়ী চিকিৎসা দিবেন।
ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ব্যায়াম
কিছু ব্যায়াম আছে যা ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। যেমন:
![]() |
কেগেল ব্যায়াম |
কেগেল(kegel)ব্যায়াম
কেগেল ব্যায়াম মূত্রনালির পেশিগুলি মজবুত করে। এই ব্যায়াম করতে মূত্রত্যাগের সময় পেশিগুলি সংকুচিত ও প্রসারিত করুন।
যোগব্যায়াম
যোগব্যায়ামের কিছু আসন যেমন তিতলাসন, ভুজঙ্গাসন মূত্রনালির পেশিগুলির স্থিতিস্থাপকতা বাড়াতে সাহায্য করে।
পরিশেষে
প্রসাবে জ্বালাপোড়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি অবহেলা করা উচিত নয়। প্রাথমিক অবস্থায় ঘরোয়া উপায়ে এটি নিরাময় করা যেতে পারে। তবে যদি সমস্যা গুরুতর হয় বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করা, সুস্থ জীবনযাত্রা বজায় রাখা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া ও ঘন ঘন প্রস্রাবের সমস্যা দূর করা যায়।
Thank you from-
1 টি মন্তব্য
Very good
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন